School College Management System

Loading...

Question View

School College Management System

Loading...

কবি-কাহিনী (তৃতীয় সর্গ), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর কাব্যোপন্যাস

কবিতা | বাংলা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কবি-কাহিনী (তৃতীয় সর্গ)

- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - কাব্যোপন্যাস: কবি-কাহিনী


কত দেশ দেশান্তরে ভ্রমিল সে কবি!
তুষারস্তম্ভিত গিরি করিল লঙ্ঘন,
সুতীক্ষ্নকণ্টকময় অরণ্যের বুক মাড়াইয়া গেল চলি রক্তময় পদে।
কিন্তু বিহঙ্গের গান, নির্ঝরের ধ্বনি,
পারে না জুড়াতে আর কবির হৃদয়।
বিহগ, নির্ঝর-ধ্বনি প্রকৃতির গীত--
মনের যে ভাগে তার প্রতিধ্বনি হয় সে মনের তন্ত্রী যেন হোয়েছে বিকল।
একাকী যাহাই আগে দেখিত সে কবি তাহাই লাগিত তার কেমন সুন্দর,
এখন কবির সেই একি হোলো দশা--
যে প্রকৃতি-শোভা-মাঝে নলিনী না থাকে ঠেকে তা শূন্যের মত কবির নয়নে,
নাইক দেবতা যেন মন্দিরমাঝারে।
বালার মুখের জ্যোতি করিত বর্দ্ধন প্রকৃতির রূপচ্ছটা দ্বিগুণ করিয়া;
সে না হোলে অমবস্যানিশির মতন সমস্ত জগৎ হোত বিষণ্ণ আঁধার।

জ্যোৎস্নায় নিমগ্ন ধরা, নীরব রজনী।
অরণ্যের অন্ধকারময় গাছগুলি মাথার উপরে মাখি রজত জোছনা,
শাখায় শাখায় ঘন করি জড়াজড়ি,
কেমন গম্ভীরভাবে রোয়েছে দাঁড়ায়ে।
হেথায় ঝোপের মাঝে প্রচ্ছন্ন আঁধার,
হোথায় সরসীবক্ষে প্রশান্ত জোছনা।
নভপ্রতিবিম্বশোভী ঘুমন্ত সরসী চন্দ্র তারকার স্বপ্ন দেখিতেছে যেন!
লীলাময় প্রবাহিণী চলেছে ছুটিয়া,
লীলাভঙ্গ বুকে তার পাদপের ছায়া ভেঙ্গে চুরে কত শত ধরিছে মূরতি।
গাইছে রজনী কিবা নীরব সঙ্গীত!
কেমন নীরব বন নিস্তব্ধ গম্ভীর--
শুধু দূর-শৃঙ্গ হোতে ঝরিছে নির্ঝর,
শুধু একপাশ দিয়া সঙ্কুচিত অতি তটিনীটি সর সর যেতেছে চলিয়া।
অধীর বসন্তবায়ু মাঝে মাঝে শুধু ঝরঝরি কাঁপাইছে গাছের পল্লব।
এহেন নিস্তব্ধ রাত্রে কত বার আমি গম্ভীর অরণ্যে একা কোরেছি ভ্রমণ।
স্নিগ্ধ রাত্রে গাছপালা ঝিমাইছে যেন,
ছায়া তার পোড়ে আছে হেথায় হোথায়।
দেখিয়াছি নীরবতা যত কথা কয় প্রাণের মরম-তলে, এত কেহ নয়।
দেখি যবে অতি শান্ত জোছনায় মজি নীরবে সমস্ত ধরা রয়েছে ঘুমায়ে,
নীরবে পরশে দেহ বসন্তের বায়,
জানি না কি এক ভাবে প্রাণের ভিতর উচ্ছ্বসিয়া উথলিয়া উঠে গো কেমন!
কি যেন হারায়ে গেছে খুঁজিয়া না পাই,
কি কথা ভুলিয়া যেন গিয়েছি সহসা,
বলা হয় নাই যেন প্রাণের কি কথা,
প্রকাশ করিতে গিয়া পাই না তা খুঁজি!
কে আছে এমন যার এ হেন নিশীথে,
পুরাণো সুখের স্মৃতি উঠে নি উথলি!
কে আছে এমন যার জীবনের পথে এমন একটি সুখ যায় নি হারায়ে,
যে হারা-সুখের তরে দিবা নিশি তার হৃদয়ের এক দিক শূন্য হোয়ে আছে।
এমন নীরব-রাত্রে সে কি গো কখনো ফেলে নাই মর্ম্মভেদী একটি নিশ্বাস?
কর স্থানে আজ রাত্রে নিশীথপ্রদীপে উঠিছে প্রমোদধ্বনি বিলাসীর গৃহে।
মুহূর্ত্ত ভাবে নি তারা আজ নিশীথেই কত চিত্ত পুড়িতেছে প্রচ্ছন্ন অনলে।
কত শত হতভাগা আজ নিশীথেই হারায়ে জন্মের মত জীবনের সুখ মর্ম্মভেদী যন্ত্রণায় হইয়া অধীর একেলাই হা হা করি বেড়ায় ভ্রমিয়া!

ঝোপে-ঝাপে ঢাকা ওই অরণ্যকুটীর।
বিষণ্ণ নলিনীবালা শূন্য নেত্র মেলি চাঁদের মুখের পানে রয়েছে চাহিয়া!
জানি না কেমন কোরে বালার বুকের মাঝে সহসা কেমন ধারা লেগেছে আঘাত--
আর সে গায় না গান, বসন্ত ঋতুর অন্তে পাপিয়ার কণ্ঠ যেন হোয়েছে নীরব।
আর সে লইয়া বীণা বাজায় না ধীরে ধীরে, আর সে ভ্রমে না বালা কাননে কাননে।
বিজন কুটীরে শুধু মরণশয্যার 'পরে একেলা আপন মনে রয়েছে শুইয়া।
যে বালা মুহূর্ত্তকাল স্থির না থাকিত কভু,
শিখরে নির্ঝরে বনে করিত ভ্রমণ—কখনো তুলিত ফুল,
কখনো গাঁথিত মালা, কখনো গাইত গান,
বাজাইত বীণা-- সে আজ এমন শান্ত,
এমন নীরব স্থির! এমন বিষণ্ণ শীর্ণ সে প্রফুল্ল মুখ!
এক দিন, দুই দিন, যেতেছে কাটিয়া ক্রমে--
মরণের পদশব্দ গণিছে সে যেন!
আর কোন সাধ নাই, বাসনা রয়েছে শুধু কবিরে দেখিয়া যেন হয় গো মরণ।
এ দিকে পৃথিবী ভ্রমি সহিয়া ঝটিকা কত ফিরিয়া আসিছে কবি কুটীরের পানে,
মধ্যাহ্নের রৌদ্রে যথা জ্বলিয়া পুড়িয়া পাখী সন্ধ্যায় কুলায়ে তার আইসে ফিরিয়া।
বহুদিন পরে কবি পদার্পিল বনভূমে, বৃক্ষলতা সবি তার পরিচিত সখা!
তেমনি সকলি আছে, তেমনি গাইছে পাখী,
তেমনি বহিছে বায়ু ঝর ঝর করি।
অধীরে চলিল কবি কুটীরের পানে--
দুয়ারের কাছে গিয়া দুয়ারে আঘাত দিয়া ডাকিল অধীর স্বরে,
নলিনী! নলিনী! কিছু নাই সাড়া শব্দ,
দিল না উত্তর কেহ, প্রতিধ্বনি শুধু তারে করিল বিদ্রূপ।
কুটীরে কেহই নাই, শূন্য তা রয়েছে পড়ি--
বেষ্টিত বিতন্ত্রী বীণা লূতাতন্তুজালে।
ভ্রমিল আকুল কবি কাননে কাননে,
ডাকিয়া সমুচ্চ স্বরে, নলিনী! নলিনী!
মিলিয়া কবির স্বরে বনদেবী উচ্চস্বরে ডাকিল কাতরে আহা, নলিনী! নলিনী!
কেহই দিল না সাড়া, শুধু সে শব্দ শুনি সুপ্ত হরিণেরা ত্রস্ত উঠিল জাগিয়া।
অবশেষে গিরিশৃঙ্গে উঠিল কাতর কবি, নলিনীর সাথে যেথা থাকিত বসিয়া।
দেখিল সে গিরি-শৃঙ্গে, শীতল তুষার-'পরে, নলিনী ঘুমায়ে আছে ম্লানমুখচ্ছবি।
কঠোর তুষারে তার এলায়ে পড়েছে কেশ,
খসিয়া পড়েছে পাশে শিথিল আঁচল।
বিশাল নয়ন তার অর্দ্ধনিমীলিত, হাত দুটি ঢাকা আছে অনাবৃত বুকে।
একটি হরিণশিশু খেলা করিবার তরে কভু বা অঞ্চল ধরি টানিতেছে তার,
কভু শৃঙ্গ দুটি দিয়া সুধীরে দিতেছে ঠেলি, কভু বা অবাক্ নেত্রে রহিছে চাহিয়া!
তবু নলিনীর ঘুম কিছুতেই ভাঙ্গিছে না,
নীরবে নিস্পন্দ হোয়ে রয়েছে ভূতলে।
দূর হোতে কবি তারে দেখিয়া কহিল উচ্চে,
"নলিনী, এয়েছি আমি দেখ্সে বালিকা।"
তবুও নলিনী বালা না দিয়া উত্তর শীতল তুষার-'পরে রহিল ঘুমায়ে।
কবি সে শিখর-'পরে করি আরোহণ শীতল অধর তার করিল চুম্বন—শিহরিয়া চমকিয়া দেখিল সে কবি না নড়ে হৃদয় তার, না পড়ে নিশ্বাস।
দেখিল না, ভাবিল না, কহিল না কিছু, যেমন চাহিয়া ছিল রহিল চাহিয়া।
নিদারুণ কি যেন কি দেখিছে তরাসে নয়ন হইয়া গেল অচল পাষাণ।
কতক্ষণে কবি তবে পাইল চেতন,
দেখিল তুষারশুভ্র নলিনীর দেহ হৃদয়জীবনহীন জড় দেহ তার অনুপম সৌন্দর্য্যের কুসুম-আলয়,
হৃদয়ের মরমের আদরের ধন—তৃণ কাষ্ঠ সম ভূমে যায় গড়াগড়ি!
বুকে তারে তুলে লয়ে ডাকিল "নলিনী", হৃদয়ে রাখিয়া তারে পাগলের মত কবি কহিল কাতর স্বরে "নলিনী" "নলিনী"!
স্পন্দহীন, রক্তহীন অধর তাহার অধীর হইয়া ঘন করিল চুম্বন।

তার পর দিন হোতে সে বনে কবিরে আর পেলে না দেখিতে কেহ, গেছে সে কোথায়!
ঢাকিল নলিনীদেহ তুষারসমাধি-- ক্রমে সে কুটীরখানি কোথা ভেঙ্গে চুরে গেল,
ক্রমে সে কানন হোলো গ্রাম লোকালয়,
সে কাননে--কবির সে সাধের কাননে অতীতের পদচিহ্ন রহিল না আর।

Author
Sabyasachi Bairagi
Date
08-04-2025

Store


ডিজিটাল স্কুল কলেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম- এসসিএমএস দেশের সর্বাধুনিক পূর্ণাঙ্গ স্মার্ট স্কুল কলেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এবং আপনার প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববাসীর কাছে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করতে এসসিএমএস পরিবারের একজন গর্বিত সদস্য হোন। বিদ্যার্থীগণ এসসিএমএস এর বিশাল তথ্য ভাণ্ডার থেকে ব্লগ, বড় প্রশ্ন, ছোট প্রশ্ন, বহুনির্বাচনী প্রশ্ন, উপকরণ, ডিজিটাল বই, ইলেক্ট্রনিক্স বই, গান, কবিতা, রচনা, ছড়াসহ বিভিন্ন বিষয়ের অধ্যয়ন করতে পারবে। বিদ্যার্থীগণ এসসিএমএস এর তথ্য ভাণ্ডার ব্যবহার করে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হবে সেই প্রত্যাশা এবং শুভকামনা রাখি।

Copyright 2025 SCMS All Right Reserved. | Developed by Sabyasachi Bairagi